সিলেটের বিশ্বনাখ একসময়ের শান্তিপ্রিয় ও অপরাধমুক্ত এলাকা হলেও এখন মাদকের অভয়ারণ্য। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে রামপাশা ইউনিয়নকে মাদকে গ্রাস করছে বেশি। ৭০ দশকের দিকে এই ইউনিয়নের একটি গ্রামে লাগাতার যাত্রাগান হয়েছিল। এই যাত্রা গানের নৃত্যশিল্পী ও কলাকৌশলিরা মদ পান করতেন। তখন থেকেই মদ ছড়িয়ে পড়ে চর্তুদিকে। স্থানীয় কিছু লোকও মাদক সেবন শুরু করে। দীর্ঘদিন একটি বাজারে মদ বেচা কেনা হয়েছিল। এনিয়ে অনেক মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ ও মামলা মোকদ্দমাও হয়েছিল।
বর্তমান রামপাশা ইউনিয়নের পূর্বপাশে শ্রীপুর গ্রামে ইব্রাহিম মাস্তান নামে একজন ভন্ডপীরের বাস ছিল। তিনি নিজেকে পীর দাবি করে জীবিত থাকাবস্থায় উরুসের প্রচলন শুরু করেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদকাশক্তরা এসে আড্ডা জমায় এখানে। সে সময় মদ ও খাজা ব্যতীত অন্য কোন মাদক দেখা যেতনা। এ ভন্ডপীরের মৃত্যুর পর তাকে দাফন করা হয় নদীর তীরে খাস জায়গায়। তার এক নিকটাতœীয় অতিরিক্ত মদপানে মৃত্যু হলে তাকেও দাফন করা হয় নদীর তীরে। প্রচার করা হয় এই দুই ভন্ডপীরের কল্পনা কাহীনি। বাড়িটি হয়ে উঠে মাদকের অভয়ারণ্য। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দুটি গেইট অতিক্রম করতে হয়। সাংবাদিক কিংবা সচেতন লোকদের ঢুকতে দেয়া হয়না। প্রতি বছর ২ বার উরুসের নামে এখানে মাদকের বিশাল আড়ৎ বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মাদকসেবিরা এখানে এসে ভীড় জমায়। কিন্তু মাদক বিক্রেতা হচ্ছে একমাত্র এই ভন্ডপীরের উত্তরাধীকারিগণ। তারা তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার মদ, গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন সহ মাদক জাতীয় দ্রবাদি উরুসে নিয়ে আসে। ৩/৪ দিনের উরুসের আসরে কোটি টাকার মত ইনকাম হয়। দান দক্ষিনাতো আছেই। এ নিয়ে কিছুদিন আগে নিজেদের মধ্যে ৭ বস্তা টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিচার বৈঠক হয়। এক সময় শতাধিক গরুও উপহার পাওয়া যেত। বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহমান নদীটি ভরাট হওয়ায় এখন নৌকাযোগে আর গরু-মহিষ ও ছাগল আসেনা। আসে নগদ টাকা, না হয় মাদক। এসব টাকা উরুসের পর সপ্তাহ খানেক বাড়ির উঠানে ও ছাদে মশারি টানিয়ে শুকানো হয়। ভাগ বাটোয়ারা দেয়া হয় পাতি নেতা, পুটি নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে। উরুসের সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের চোখ থাকে অন্ধকার। পুলিশের কেউ কেউ নাছ গানেও মগ্ন হয়ে পড়েন। আমাদের হাতে থাকা ভিডিওতে কিছুদিন আগে শেষ হওয়া উরুসে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নারীদের সাথে পোষাক পরে নাচ গান করতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি সম্প্রতিকালে একটি মাজারকে কেন্দ্র করে মাদকের বিরাট হাট বসে। পুলিশের অসৎ কিছু কর্মকর্তা এখান থেকে মাসিক বখরা আদায় করে থাকেন। বিষয়টি একেবারে অপেন সেক্রেট। মাজার মালিকরা নিজেকে রক্ষা করতে নিজের টাকায় কেনা মাদক পুলিশকে ধরিয়ে দিয়ে নিজেকে রক্সা করার চেষ্টা করে। কিছুদিন পূর্বে ফয়ছল নামের এক যুবককে গাজাসহ গ্রেফতার করে বিশ্বনাথ পুলিশ। এ ঘটনাটি ছিল মাজার মালিক জিতু মিয়া ও কাপ্তান শাহ’র কৌশল। ফয়ছল নামের এ যুবক মাজারের একজন নিয়মিত সেচ্ছাসেবক ও নিকটাত্মীয়। কয়েক বছর পূর্বে এই মাজারের গাজা সেবন অবস্থায় একজন এসআই এর ছবিসহ সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তদন্ত শেষে উক্ত পুলিশ সদস্যকে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই মাজারের মাদকের ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য মাজার মালিক পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ফয়ছল নামের যুবককে গাজাসহ ধরিয়ে দেয়া হয়। ফয়ছল গ্রেফতারের পর মাজারের কথিত খাদেম থানায় গিয়ে অন্য একজন লোকের নাম বলার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসে। কিছুদিন পূর্বে এই ফয়ছল মাদক মামলায় হাজতবাস করে জামিন নিয়ে আসে।
স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ এই মাজারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। এবং এলাকার যুবসমাজ মাদক সেবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বলতে গেলে প্রতিদিন রাতেই সবধরনের মাদক সেবন ও বেচাকেনা করা হয়ে তাকে এই মাজারকে কেন্দ্র করে।
অশ্লীলতা বন্ধ করলে এ এলাকা মাদক মুক্ত হওয়ার আশা করা যাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধতন মহলের নজর দিলেই সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ শামিম মুছা জানান, শ্রীপুর মাজারের মাদকের বেচাকেনার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আমরা এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্তা গ্রহন করব।