গ্রামবাংলায় কখনও কখনও পদ্মের মতো দেখতে একধরনের ফুল দেখতে পাওয়া যায় যারা জলে ফোটে। অনেকেই এই ফুলকে পদ্ম বলে ভুল করেন। আসলে এই ফুল হল শাপলা ফুল। ইংরাজিতে যার নাম ওয়াটার লিলি। কেউ কেউ একে শালুক ফুল বলেও ডাকেন। তবে যে নামেই তাকে ডাকা হোকনা কেন,তার গুণাগুণ সম্পর্কে জানলে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে।
মূলত অগভীর জলাশয়ে পাওয়া যায় এই ফুল। সাত ইঞ্চি থেকে বারো ইঞ্চি ব্যাসের খাজ কাটা পাতা ভেসে থাকে জলের উপর। আর মাঝে মাঝে জেগে থাকে শাপলা ফুল। লাল, নীল, সাদা, মেরুন, গোলাপী এমনকী নীল রংয়েরও এই ফুল গ্রামের ছোট পুকুর বা জলাশয়ের শোভা বর্ধন করে থাকে। কাণ্ডের দৈর্ঘ্য নির্ভর করে জলাশয়ের গভীরতার উপর। এ ফুলের জন্ম বহু বছর আগেই। গ্রিক দেশের জলদেবীর উপাসনার জন্য শাপলাকেই ব্যবহার করা হতো। হিন্দুদের সর্পদেবী মনসা পুজোতেও লাগে। বাংলাদেশের জতীয় ফুল হল শাপলা। হালকা নীলাভ সাদা পাপড়িযুক্ত এই ফুল শ্রীলঙ্কারও জাতীয় ফুল হিসেবে চিহ্ণিত। এদেশের বৌদ্ধদের বিশ্বাস গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপে পাওয়া ১০৮ টা শুভ চিহ্ণের মধ্যে একটা হল শাপলা ফুল। ভরতীয় উপমহাদেশ ছাড়া সারা বিশ্বে ৩৫ রকমের শাপলা পুল পাওয়া যায়। অসমে একে নাল ফুল বলে ডাকা হয়। যার মূল থাকে পাঁকের মধ্যে গাঁথা। কাণ্ড থাকে ফুল এবং মূলের সঙ্গে যুক্ত।
এতো গেল শাপলার রকমফের। এবার খোলসা করে বলা যাক তার অসীম গুণের কথা। শাপলার ফলের মধ্যে সরষের মতো আকৃতির অসংখ্য বীজ থাকে। যা শুকিয়ে খৈ তৈরি করা হয়। গোড়ার দিকে এক ধরনের কন্দ থাকে যার আসল নাম শালুক। সব্জি হিসেবে রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি মেলা ভার।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা মতে এর রোগ সারানোর ক্ষমতাও অনেক। মূলাকার কাণ্ড শুকিয়ে পাউডারের মতো করে নিয়ে খেতে পারলে সেরে যায় অজীর্ণ রোগ।
সারে জ্বর, বমি বমি ভাব। ভালো হয় অর্শের মতো জটিল রোগ। শরীরের হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এতো গেল খাওয়ার কথা। শাপলা ফুলের বীজ বেঁটে চামরায় মাখলে চর্মরোগ সেরে যায়। ত্বক নরম ও মসৃন হয়। মুখের ব্রণ ভালো হয় খুব দ্রুত। শাপলার মূল চায়ের মতো ব্যবহার করলে কফ্ নেমে যায়। গলায় সংক্রমণ হলে শাপলার মূলের জল দিয়ে গার্গেল করতে ভুলবেননা যেন। এ ফুলের মূল ও পাতা বেঁটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথার উপশম হয়।
এহেন গুণের অধিকারী শাপলা ফুলেই হতে পারে আপনার রোগের শাপমুক্তি।
নির্বাহী সম্পাদক