Home » বিশ্বজুড়ে নতুন করে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা

বিশ্বজুড়ে নতুন করে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক : চলতি বছর শেষের আগেই বিশ্বজুড়ে নতুন করে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ। এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ মুহূর্তে কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী-সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও বছর শেষের আগেই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। 

জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের বিশেষ পর্যবেক্ষকদের এক প্রতিবেদনে বৈশ্বিক ইসলামী জঙ্গি কার্যক্রমের এক শঙ্কাজনক চিত্রই উঠে এসেছে বলে জানায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি হামলাকারীরা চুপচাপ থাকলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনো বেশ নাজুক। ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে যাওয়া ৩০ হাজারের মতো বিদেশি নাগরিক এখনো জীবিত রয়েছেন। তাঁদের নিয়েই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আসন্ন ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। তারা আল-কায়েদা কিংবা নতুন করে গড়ে ওঠা কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিতে পারে। তাদের মধ্যে কেউ এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতাও হয়ে উঠবে, আবার কেউ হবে হামলার পৃষ্ঠপোষক।’ জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৃশ্যত ইসলামিক স্টেটকে বিলুপ্তপ্রায় মনে হলেও জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো মনে করে, আইএসের উত্থানের পেছনে যে অনুঘটকগুলো কাজ করেছে, সেগুলো এখনো রয়েই গেছে। তাই আইএস কিংবা আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী হুমকি খুব সহসাই বন্ধ হচ্ছে না।প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জেলখানায় দারিদ্র্য, নিপীড়নের শিকার হওয়া, হতাশাগ্রস্ত, হীনমন্যতায় ভোগা ও সহিংসতার শিকার কয়েদিদের জঙ্গি মৌলবাদে জড়িয়ে পড়া অন্যতম প্রধান চিন্তার বিষয়। 

কট্টর মৌলবাদ রোধের বিভিন্ন প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি বলে এ প্রতিবেদনে বলা হয়। বিভিন্ন জেলখানায় থাকা দুর্ধর্ষ ইসলামী জঙ্গি যোদ্ধাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়। ইউরোপীয় দেশগুলো জানিয়েছে, আইএস বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেওয়ার জন্য ইরাক ও সিরিয়া গেছেন ইউরোপের অন্তত ছয় হাজার নাগরিক। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ নিহত হয়েছেন। আরো এক-তৃতীয়াংশ এখনো সেখানে রয়ে গেছেন কিংবা অন্য কোথাও চলে গেছেন।  ইউরোপের এসব নাগরিকের মধ্যে দুহাজার কিংবা তার বেশি নাগরিক ইউরোপে ফিরে এসেছেন।

এ ছাড়া সিরিয়ায় মার্কিন সেনানিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন বন্দিশিবিরে গাদাগাদি করে আটকে রাখা হাজারো জঙ্গি ও তাদের পরিবারও বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর সংখ্যক শিশু তুলে এনেছিল আইএস জঙ্গিরা। আর অনেক শিশুর জন্মও দিয়েছে এসব জঙ্গি। এসব শিশু এখন এতিম, বাস্তুহীন কিংবা ছন্নছাড়া অবস্থায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের খড়গ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য সিরিয়ার উদ্দেশে দেশছাড়া নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে চায় না পশ্চিমা দেশগুলো। কারণ দেশগুলো জানে, এসব নাগরিকের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি তো থাকছেই। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসের হাতে ৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আছে। এই অর্থ তারা নিজেদের বিভিন্ন প্রপাগান্ডা হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার গির্জা ও হোটেলে হামলার ব্যাপারে আগে থেকে জানতেন না ইসলামিক স্টেটের নেতারা।

এসব হামলা আইএস আদর্শে উদ্বুদ্ধ স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী ঘটিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সিরিয়ায় পরাজিত আইএসের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই এসব হামলা করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়। আল-কায়েদা এখনো সক্রিয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সংগঠনটির ৬৮ বছর বয়সী নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বড় একটি অংশজুড়ে ছিল পশ্চিম আফ্রিকায় ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলোর সহিংস উত্থানের বিষয়টি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য আফ্রিকাজুড়ে একটি আইএসপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে এদের মূল ঘাঁটি। তবে এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে আদৌ হুমকি মনে করার কোনো কারণ আছে কি না কিংবা বাস্তবে এদের সঙ্গে মূল আইএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে মতদ্বৈধতা রয়েছে। মধ্য আফ্রিকার কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এই আইএসপন্থী জঙ্গি সংগঠনকে হুমকি মনে করলেও অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন দাবিকে ‘সুবিধাবাদী’ আচরণ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *