Home » ভোটের লড়াইয়েও হারলেন সিলেটের জাহাঙ্গীর-আফসর

ভোটের লড়াইয়েও হারলেন সিলেটের জাহাঙ্গীর-আফসর

দ্বন্দ্বেই ডুবলেন সিলেটের জাহাঙ্গীর ও আফসর। কেউ কাউকে ছাড় দেননি। দু’জনই হন প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত দু’জনেরই হলো ভরাডুবি। দু’জনের হারে দ্বন্দ্বও জিইয়ে থাকলো। হারের পর উভয় বলয়েই ক্ষোভ চলছে। কেউ কেউ বলছেন- দু’জন এক হলে জয় হতো মেজরটিলার। জাহাঙ্গীর আলম। এক নামেই পরিচিত তিনি। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তুখোড় ছাত্রনেতা। বর্তমান সময়ে এমসি ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রক বলা হয় তাকে।

রাজনীতিতে নামের পাশে সফল অধ্যায়ের পাশাপাশি আছে বিতর্কও। তবে- সাম্প্রতিক সময়ে এলাকার মানুষের কাছে তিনি ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছেন। জনপ্রতিনিধির পারিবারিক ঐতিহ্যে আছে তার হাঁক-ডাক। কম নন এডভোকেট আফসর আহমদ। সিলেট নগরঘেঁষা খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি। মন্ত্রীঘেঁষা লোক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। জাহাঙ্গীর ও আফসরের বাড়ি সিলেট শহরতলির মেজরটিলা ইসলামপুরে। দু’জনের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে এলাকায়। এবারের সিলেট জেলা যুবলীগের কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এডভোকেট আফসর আহমদ। আর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রায় দুইমাস আগে থেকেই তারা মাঠে সক্রিয়। কিন্তু শেষে মত পরিবর্তন করেন এডভোকেট আফসর আহমদ। জেলা যুবলীগের বর্তমান নির্বাচিত সভাপতি ভিপি শামীম আহমদকে ছাড় দিয়ে তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ঘোষণা করেন।

আর এতেই দেখা দেয় বিপত্তি। একই এলাকার জাহাঙ্গীরের মুখোমুখি হয়ে যান তিনি। ক্ষুব্ধ হন জাহাঙ্গীর। এই ক্ষোভের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন- খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে তিনিও ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ওই সময় তিনি ছাড় দিয়েছিলেন আফসর আহমদকে। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচিত হন আফসর আহমদ। তার জয়ে মেজরটিলার সব মানুষের অবদান ছিল। কিন্তু ওই সময়ের ত্যাগের কথা স্মরণ না রেখে আফসর আবারো মুখোমুখি হন। এদিকে- এই মুখোমুখি হওয়ার পর প্রায় মাস খানেক আগে দু’জন জড়িয়ে পড়েন মাঠের যুদ্ধে। তুমুল সংঘর্ষ হয় শাহ্‌পরাণ এলাকায়। হামলা পাল্টা হামলায় উত্তাল হয়ে উঠে খাদিমপাড়া। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচিত হন জাহাঙ্গীর ও আফসর।

সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জনের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে। পুলিশের মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর নামেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে। টিলাগড়কেন্দ্রিক ছাত্রনেতা হওয়ার কারণে তার পরিচিতি ছিল দলের ভেতরে। কোনো বলয়ের প্রার্থী ছিলেন না তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত না হলেও পরাজিত করেছেন আফসর আহমদকে। সোমবার সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জেলা যুবলীগের সম্মেলন। এতে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন জাহাঙ্গীর ও আফসর। রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফলে দেখা গেছে- সাধারণ সম্পাদক পদে সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য শামীম আহমদ পেয়েছেন ১০৭ ভোট, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৭১। আর এডভোকেট আফসর আহমদ পেয়েছেন ৬৭ ভোট। ভোটের হিসাবে আফসর থেকে চার ভোট বেশি পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীর-আফসর পক্ষের সংঘর্ষের সময়ই অনেক পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল নতুন সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের পথ। শামীম আহমদ নিজে প্রার্থী হয়ে ওই সময় থেকেই নীরবে-নিভৃতে কাজ করছিলেন। জেলা পরিষদের সদস্যকেন্দ্রিক বলয়টিও তার পক্ষে সক্রিয় হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়া যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জকিগঞ্জের সন্তান ড. আহমদ আল কবিরও শামীমের পক্ষে একাট্টা ছিলেন। ফলে শামীমের জয় অনেকটা সহজ হয়। ফলাফল ঘোষণার পর কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা সোমবার রাতে কাউন্সিলস্থল কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে মন্তব্য করেন- কোন্দল এবং সংঘর্ষে না জড়িয়ে জাহাঙ্গীর ও আফসর সমঝোতায় গেলে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়াই আরো বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। এদিকে- ওয়ান ইলেভেনের সময় সিলেট জেলা যুবলীগের দুর্দিনে কাণ্ডারী হয়েছিলেন ভিপি শামীম আহমদ। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে ১১ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এবারের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে তিনি তার অবস্থান ধরে রেখেছেন। কাউন্সিলররা তাকে হতাশ করেনি। ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন। আর এই কাউন্সিলের মাধ্যমে ভারমুক্ত হলেন তাজপুর ডিগ্রি কলেজের এক সময়ের ভিপি শামীম আহমদ।

সূত্র: মানবজমিন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *