Home » রোহিঙ্গাদের বোঝাতে আজ আসছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল

রোহিঙ্গাদের বোঝাতে আজ আসছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে এতদিন দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান খুঁজেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের ঘনঘন মত পরিবর্তন ও ছলচাতুরীর কারণেই প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। খুব শিগগিরই রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরবেন তাও দেখা যাচ্ছে না।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন আশা করেন আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সামগ্রিক বিষয় জানাতে ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে আজ শুক্রবার রাতে বাংলাদেশে আসবে মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিবের নেতৃত্ব ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোয় রোহিঙ্গা ও তাদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। রোহিঙ্গাদের বোঝানো হবে রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের প্রত্যাবাসনে দেশটির সঙ্গে চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পথ খোলা রেখেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করছে বাংলাদেশ।

এর মধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন অবশ্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তিনি বলেন, আমি আশা করছি মিয়ানমার আপত্তি না জানায় তা হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। মিয়ানমার বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে আছে। তা ছাড়া সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। এ অবস্থায় মিয়ানমার সেখানকার চাপ এড়াতে চাইবে। তাই আমার মনে হচ্ছে সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে।

বিভিন্ন দেশের সরকার ও সুশীল সমাজকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পক্ষে জনমত গঠনে ইতোমধ্যে সম্পৃক্ত করতে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এটি অগ্রাধিকারমূলক বিষয়। মিয়ানমার বাংলাদেশের বন্ধু দেশ। তারা যদি বন্ধুত্বের প্রতিফলন দেখায় তবে এ সমস্যা সহজেই মিটে যাবে। সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও ভূমিকা চাই।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা-আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার জন্য জোর কূটনীতিক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক চ্যানেলে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হচ্ছে বাংলাদেশের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন আসিয়ানের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তদারকিসহ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ও সিভিল সোসাইটিকে সংশ্লিষ্ট করতে অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। বিভিন্ন দেশের অনারারি কনসাল জেনারেল এবং বিদেশে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেলদের চিঠি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান। চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বোঝা অনির্দিষ্টকালের জন্য বহন করতে বাংলাদেশ সক্ষম নয়। যুগের পর যুগ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ও দুর্দশাগ্রস্ত এ জনগোষ্ঠীর অবস্থান এ দেশে দীর্ঘায়িত হলে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরসহ ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালের মতো মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকভাবে এ সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসরণ করে নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য দৃশ্যমান সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমার ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমারের চরম অনাগ্রহের কারণে এখনো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বদেশে প্রত্যাবাসন শুরুর কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে। অনেক চ্যালেঞ্জ ও বাধা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনায় এ অসহায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয় দেওয়ার মতো সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন বলেও চিঠিতে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সূত্র: আমাদেরসময়

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *