নিজস্ব প্রতিবেদনঃ সিলেটের জকিগঞ্জে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে বড় ভাইকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে ছোট ভাইয়ের ফাঁসির রায় দিয়েছেন সিলেটের একটি আদালত। একই সাথে তাকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও করা হয়েছে। রোববার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম মামলার রায় ঘোষণা করেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জাকির হোসেন জকিগঞ্জ পৌরশহরের কেছরি গ্রামের মরহুম শফিকুল হকের ছেলে।
সিলেট জেলা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি শামসুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামলার বরাত দিয়ে তিনি জানান, ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট সকালে ঘুমন্ত অবস্থায় জকিগঞ্জ লাকি হোটেলের মালিক কামাল হোসেনকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে তার সৎভাই জাকির হোসেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় কামালের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রাহেনা বাদি হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রোববার আদালত রায় ঘোষণা করেন।
২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট জকিগঞ্জ পৌর শহরে থাকা লাকি হোটেলের স্বত্বাধিকারী কামাল আহমদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুপিয়ে হত্যা করে তাঁর সৎ ভাই। এ ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রাহেনা জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি দায়েরকৃত মামলার লিখিত অভিযোগে বলেন, তার স্বামী কামাল আহমদ জকিগঞ্জ বাজারের লাকি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট-১ এর পিছনের বাসায় সন্তানাদি ও দেবর জামাল আহমদের পরিবারকে নিয়ে বসবাস করতেন।
তার স্বামীর সৎ ভাই জাকির হোসেন খলাছড়া গ্রামে তাদের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বসবাস করেন। আসামী জাকির হোসেন ও তার অন্যান্য ভাইদের সাথে তার স্বামীর দীর্ঘদিন থেকে পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা চলছিল।
ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে তিনি ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে চা-আনতে হোটেলে যান। তখন তার স্বামী কামাল আহমদ ও মেয়ে জিনানুল জান্নাত নিহা (১০) বাসার পশ্চিম পাশের রুমের খাটের উপর ঘুমে ছিলেন।
সকাল অনুমান ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে তার স্বামীর সৎ ভাই আসামী জাকির হোসেন তাদের বাসার ভিতরে প্রবেশ করে তার দেবর জামাল আহমদের হোটেলের কাজের মহিলা মল্লিকা বেগম ঘরের সামনের বারান্দায় বসিয়া ধারালো বড় বটি দা দ্বারা সবজি কাটতে দেখে সে ওই মহিলাকে জামাল আহমদের স্ত্রীকে ডাকতে বলেন।
এ সময় মল্লিকা বেগম জামাল আহমদের স্ত্রীকে ডাকতে গেলে আসামী জাকির হোসেন সবজি কাটার ধারালো বড় বটি দা হাতে নিয়ে তাদের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে তার স্বামী কামাল আহমদকে ঘুমন্ত অবস্থায় এলোপাথাড়িভাবে কোপিয়ে বুক, হাত, পেট ও পায়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
এ সময় তিনি তার স্বামী ও মেয়ে নিহার ডাক চিৎকার শুনে দ্রুত শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে আসামী জাকির হোসেনকে আটকানোর চেষ্টা করেন। তখন আসামী জাকির হোসেন তাকে কোপানোর ভয় দেখিয়ে রক্তমাখা বাটি দা হাতে নিয়ে দ্রুত দৌড়ে জামালের হোটেলের ভিতর দিয়ে বের হয়ে পালিয়ে যায়।
পালিয়ে যাওয়ার সময় তার হাতে থাকা রক্তমাখা বটি দা লাকি হোটেলের সামনে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের পাশে ফেলে যায়। ঘটনার পর তাদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ঘটনা দেখেন এবং শুনেন।
তাৎক্ষণিক পরিবারের লোকজন জকিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেটে প্রেরণ করেন। এমতাবস্থায় তিনি তার স্বামীকে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় সিলেট এমএজি.ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান