ডেস্ক নিউজঃ
বর্তমানে আবেদনের ভিত্তিতে ড্রোন ওড়ানোর অনুমতি দিলেও দেশে কতগুলো ড্রোন রয়েছে, এগুলোর মালিক কারা— এমন তথ্য নেই রাষ্ট্রীয় কোনও সংস্থার কাছে। এ কারণে ড্রোনের রেজিস্ট্রেশন ও এর অপারেটরদের লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনার উদ্যোগ নিচ্ছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। এ লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালাটি সংশোধন করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আমদানির নীতিমালা না থাকায় দেশে অবৈধভাবে আসছে ড্রোন। এ অবস্থায় বৈধভাবে ড্রোন আমদানির সুযোগ করে দিতে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, ড্রোন ওড়ানোর ৪৫ দিন আগে অনুমতি নিতে হয় সিভিল এভিয়েশন থেকে। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সেটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে অনুমতি দেয় সিভিল এভিয়েশন। ৫ পৃষ্ঠার এ আবেদনপত্রে ড্রোন কোথায় ওড়ানো হবে, কে ওড়াবে, ড্রোনের আকার, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিতে হয় আবেদনকারীকে। বর্তমানে মাসে এমন শতাধিক আবেদন জমা পড়ে সিভিল এভিয়েশনে।
জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ড্রোনের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ড্রোনটি কে অপারেট করছেন, তা শনাক্ত করতে ছোট-বড় সব ড্রোন রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রোন অপারেটরদের লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনার ব্যবস্থা রয়েছে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিভিল এভিয়েশন অথরিটিও একইভাবে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সিংয়ের বিধান যুক্ত করে নীতিমালা সংশোধনের কাজ করছে।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ড্রোন উড্ডয়নে বিধিবিধান মানার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের আকাশসীমায় সব বিমান চলাচল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের রেগুলেশন এবং বিমানবাহিনীর নির্ধারিত নিয়মনীতি ও সরাসরি নিয়ন্ত্রণ দ্বারা পরিচালিত হয়। পরীক্ষামূলক ড্রোন বা রিমোট কন্ট্রোলচালিত বিমান/হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ানোর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমানবাহিনীর অনুমোদন নিতে হবে।
বর্তমানে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির রেগুলেশন ফর অপারেটিং রিমোটলি পাইলট এয়ারক্রাফট সিস্টেম (আরপিএএস) নামে একটি নীতিমালা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আঠারো বছরের কম বয়সী কেউ ড্রোন উড্ডয়নের অনুমতি পাবে না। মদ্যপানের ৮ ঘণ্টার মধ্যে কেউ ড্রোন ওড়াতে পারবেন না। ড্রোনটি কোনও ক্ষতি সাধন করলে তার দায় ড্রোনের অপারেটরকে বহন করতে হবে। ড্রোন যে স্থানে ওড়ানো হবে সে এলাকার ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে। ভূমি থেকে ২০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় ড্রোন ওড়ানো যাবে না। যেকোনও বিমানবন্দরের ১০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ড্রোন ওড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দরের অ্যারোড্রম অপারেটরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। একজন ব্যক্তি একসঙ্গে একাধিক ড্রোন ওড়াতে পারবেন না। এখন এই নীতিমালা সংশোধন করে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সিংয়ের বিধান যুক্ত করা হচ্ছে।
সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট সেফটি বিভাগের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ড্রোন নিয়ে আমাদের একটি নীতিমালা আছে। কোথায় ওড়ানো যাবে, কোথায় যাবে না, ওড়ানোর ক্ষেত্রে কী কী বিধিনিষেধ মানতে হবে–সবই এই নীতি মালায় রয়েছে। তবে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হচ্ছে, তাই নীতিমালায়ও পরিবর্তন আসবে। এতদিন শুধুমাত্র ড্রোন ওড়ার জন্য অনুমতির দেওয়া হতো। তবে ড্রোনের পরিসংখ্যান, নিয়ন্ত্রণ এসব বিষয়ে আরও জবাবদিহিতা ও নজরদারি বাড়াতে প্রতিটি ড্রোনকে রেজিস্ট্রেশন ও ড্রোনের অপারেটরদের লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মূলত ড্রোন যেন আকাশপথে বিমান ও হেলিকপ্টার চলাচলে বিঘ্ন না ঘটায় সেটি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ড্রোন যেন নাশকতায় ব্যবহার না হয়, এজন্য ড্রোন কারা কিনছেন বা তৈরি করছেন তা জানতে লাইসেন্সিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি ড্রোনের সেফটি ফিচারগুলো। ড্রোনের ব্যাটারি শেষ হওয়ার আগেই ফিরে আসা, রিমোট কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাওয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ড্রোন ব্যবহার নিয়ে নীতিমালা আছে। কেউ আবেদন করলে সেটি যাচাই করেই অনুমতি দেওয়া হয়। তবে ড্রোন নিয়ে সামগ্রিক একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। সেখানে আকাশপথের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় থাকবে।’
এদিকে, নীতিমালা না থাকায় অবৈধভাবে দেশে আসছে ড্রোন। নীতিমালা না থাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ড্রোন আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা পড়লেও অনুমতি দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ড্রোন আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ঢাকা কাস্টম হাউস ও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর বিমানবন্দর ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক ড্রোন আটক করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈধপথে ড্রোন আমদানির সুযোগ দিতে নীতিমালা প্রণয়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ড্রোন আমদানির নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সিভিল এভিয়েশনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থারও মতামত নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগ) শামিমা ইয়াছমিন বলেন, ‘বর্তমানে ড্রোন আমদানির কোনও নীতিমালা নেই। নীতিমালা না থাকার কারণে এই মুহূর্তে আবেদন করলেও কাউকে ড্রোন আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে একটি নীতিমালা প্রণয়ণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। তাদের দেওয়া মতামতগুলো বিবেচনা করেই একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।’
বার্তা বিভাগ প্রধান