Home » ওমান উপসাগরে তেল ট্যাংকারে হামলা, ইরানকে দুষছেন ট্রাম্প

ওমান উপসাগরে তেল ট্যাংকারে হামলা, ইরানকে দুষছেন ট্রাম্প

হরমুজ প্রণালীর কাছে ওমান উপসাগরে দুটি তেলের ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় ইরানকে অভিযুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা। ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা মানতে নারাজ।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন একটি ভিডিও ফুটেজ আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড ক্ষতিগ্রস্ত একটি তেলের ট্যাংকারের একপাশ থেকে একটি অবিস্ফোরিত মাইন বা বোমা সরিয়ে নিচ্ছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এ বিষয়ে বলেছেন, সত্যটা কী সেটা ‘স্পষ্টভাবে প্রমাণিত’ হতে হবে। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে ‘দ্রুত কোনো উপসংহারে’ না পৌঁছানোর সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়া।গত বৃহস্পতিবার হরমুজ প্রণালীর কাছে ওমান উপসাগরে দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা হয়। ট্যাংকার দুটির একটি নরওয়ের মালিকানাধীন ফ্রন্ট অলটেয়ার এবং অন্যটি জাপানের মালিকানাধীন কোকুকা কারেজিয়াস। ইরান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুটি ট্যাংকার থেকে তারা ৪৪ জনকে উদ্ধার করেছে।

এক মাসের ব্যবধানে এ নিয়ে ছয়টি ট্যাংকারে চোরাগোপ্তা হামলা হলো। মাসখানেক আগে এমন আরেকটি হামলায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ওমান উপসাগরে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো চারটি তেলের ট্যাংকার। ওই হামলার জন্যও যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দায়ী করেছিল। যদিও সেবার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে অবনতি হয়েছে। গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা সরকারের করা একটি পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনে ট্রাম্প প্রশাসন। এ ছাড়া কোনো দেশ যেন ইরান থেকে তেল কিনতে না পারে, সেজন্যও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। পাল্টা জবাবে তেল রপ্তানি বন্ধ হলে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার হুমকি দিয়ে আসছে ইরান।

হরমুজ প্রণালী ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রে কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

বলা হয়ে থাকে, হরমুজ প্রণালী হলো বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সমুদ্রপথ।হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তেল রপ্তানি করা হয়।

এই প্রণালীর এক পাশে আছে আরব দেশগুলো, অন্য পাশে ইরান। হরমুজ প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে ইরান ও ওমানের দূরত্ব মাত্র ২১ মাইল। জাহাজ চলাচলের জন্য এই প্রণালীতে দুটো লেন আছে। প্রতিটি লেন দুই মাইল চওড়া।পৃথিবীতে যতটুকু জ্বালানি তেল রপ্তানি হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ যায় হরমুজ প্রণালী দিয়ে। প্রতিদিন এক কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল তেল এই প্রণালী দিয়ে রপ্তানি হয়।

এদিকে নতুন করে তেল ট্যাংকারে হামলার পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হামলার দিন বৃহস্পতিবারই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম চার শতাংশ বেড়ে যায়।

বাণিজ্য বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, গুরুত্বপূর্ণ এ পথ বন্ধ হলে বিশ্ব তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে। এদিকে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা ঠেকাতে এবং হরমুজ প্রণালীকে উন্মুক্ত রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান ও বাড়তি সেনা মোতায়েন করে রেখেছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *