Home » কোন কোম্পানির দুধে ক্ষতি জানতে চায় মানুষ: হাইকোর্ট

কোন কোম্পানির দুধে ক্ষতি জানতে চায় মানুষ: হাইকোর্ট


ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে তা নিরূপণ করে একটি তালিকা তৈরি ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলে ফের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে আগামী ২৩ জুন ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন।

এদিন বাজারে প্রাপ্য দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে– এই প্রতিবেদনের গ্রহণযেগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএসটিআই। বুধবার তাদের আইনজীবী আদালতকে জানান, যে প্রক্রিয়ায় দুধের নমুনা সংগ্রহ করেছিল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি সেটিও সঠিকভাবে হয়নি। পরে এ প্রতিবেদনের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) কারিগরি ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসকে তলব করেন আদালত। আগামী ২১ মে ওই প্রতিবেদনসহ তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অনুজীবসহ দুধ-দই উৎপাদনকারীদের শাস্তি হতে হবে। কোন কোন কোম্পানির দুধ ক্ষতিকর, তা জানতে চায় সাধারণ মানুষ। ক্ষতিকর দুধের তালিকা তৈরি করুন। সাধারণ মানুষকেও এটা জানিয়ে সচেতন করতে হবে। প্রতিবেদনের বিষয় ওয়েব সাইটেও দিতে হবে।

এর আগে গত ৮ মে রাসায়নিক, কীটনাশক ও সিসা দিয়ে দুধ ও দই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দাখিল করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে প্রতিবেদন দাখিল এবং ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানির জন্য বুধবার দিন নির্ধারণ রেখেছিলেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুহম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান।

পরে আইনজীবী আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে এনএফএসএলে’র কারিগরি ব্যবস্থাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসকে ওই প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি এখনও প্রতিবেদন আদালতে জমা দেননি। এ কারণে ২১ মে ওই প্রতিবেদনসহ তাকে হাইকোর্টে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। আর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে ক্ষতিকারক দুধ ও দইয়ের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নামসহ তাদের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ২৩ জুন আদালতে দাখিল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে আদালতে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এক মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এটা বড় একটা কাজ। বিভিন্ন রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে। বৈঠক করে তা স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর ও নিম্নমানের তা নিরূপণ করে প্রতিবেদন দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ডা. শাহনীলার প্রতিবেদন সংগ্রহ করবো। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের করা ১৬ সদস্যের কমিটিতে তিনিও একজন সদস্য।’

প্রসঙ্গত, সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরদিন সংবাদটি জনস্বার্থে আদালতের নজরে আনেন একজন আইনজীবী। ওইদিন ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারগুলোতে দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবারে কী পরিমাণ ভেজাল (ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা) মেশানো হয়েছে তা পরীক্ষা করে জরিপ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *