কর্মচারী নির্যাতনের অভিযোগে নিউজিল্যান্ডে সাজা পেলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এক দম্পতি। মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম ও নাফিসা আহমেদ নামে ওই দম্পতি বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে তাদের নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করাতেন ও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন। তারা দুজনেই নিউজিল্যান্ডের নাগরিক। কর্মচারী নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি তাদের এ সাজা দেন অকল্যান্ড জেলা আদালত।
এছাড়া, দুই কর্মচারীকে ধোঁকা দিয়ে দেশটিতে নিয়ে যাওয়াসহ আতিকুল ও নাফিসার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি অভিযোগ এনেছে ইমিগ্রেশন নিউজিল্যান্ড (আইএনজেড)। তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচারেরও অভিযোগ ছিল। তবে আদালতে দীর্ঘ শুনানির পর এ অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তারা।
চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম ওরফে কাফি ইসলামের বিরুদ্ধে শ্রমিক নির্যাতনের ১০টি, অভিবাসন সংক্রান্ত সাতটি ও আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার তিনটি অপরাধ প্রমাণিত হয়। ত্রিশোর্ধ্ব নাফিসা আহমেদ পেশায় হিসাবরক্ষক। তার বিরুদ্ধেও যৌথভাবে পাঁচ কর্মচারীকে সাতটি নির্যাতনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ দম্পতির রয়েল সুইট ক্যাফে নামে মিষ্টি জাতীয় খাবারের দোকান রয়েছে। এটি অনেকের কাছেই রয়েল বেঙ্গল ক্যাফে নামেও পরিচিত। ওই দোকানের দুই শেফ নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের দুর্দশা জানিয়ে অভিযোগের পরই কর্মচারী নির্যাতনের এ ঘটনা সামনে আসে।
বাংলাদেশে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ওই দুই শেফ নিউজিল্যান্ড যান। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেন আতিকুল ও নাফিসা।
ভুক্তভোগী দুই শেফের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মামলার বিচারক ব্রুক গিবসন।
আদালতে তিনি বলেন, ক্যাফের কর্মচারীরা টানা কাজ করে গেলেও তাদের মাত্র এক ঘণ্টার ছয় ডলার পরিশোধ করা হতো। বাকি সময় বা ছুটিরদিন কাজের জন্য তারা কোনো মজুরি পাননি। এভাবে দুই বছর ধরে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। ‘আতিকুল ও নাফিসার পরামর্শে ওই কর্মচারীরা অস্থায়ী ভিসা নিয়ে এসেছিলেন। তাদের আইনে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও অনেক বেশি কাজ করানো হয়েছে।’
টানা কাজ করায় কয়েকজন ভুক্তভোগীর হাত-পা ফুঁলে গেছে বলে জানিয়েছেন ক্রাউন প্রসিকিউটর জ্যাকব প্যারি।
ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এক শ্রমিক ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো মারাই যাবেন। আরেকজন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে থাকতেও তাদের এত বেশি কাজ করা লাগেনি।
বিচারক গিবসন বলেন, উচ্চ শিক্ষিত আতিকুল ও নাফিসার এক পুত্র সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিউজিল্যান্ডে ব্যবসা করা এ দম্পতি দেশটির শ্রম আইন সম্পর্কেও আগে থেকেই জানতেন।
তিনি বলেন, আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণাদিতে দেখা গেছে, ব্যবসায়িক লাভের আশায় এ দম্পতি সুপরিকল্পিতভাবে কর্মচারীদের নির্যাতন করেছেন।
নিজ দেশের মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ অত্যন্ত স্বার্থান্বেষী ও লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন বিচারক।
বার্তা বিভাগ প্রধান