Home » হরিবওওওল: ডন সামাদ

হরিবওওওল: ডন সামাদ

আজিজুস সামাদ ডন:

 সেদিন এক অনুষ্ঠানে বিরোধী দলীয় কিছু নেতার সাথে আমি সহ আমাদের দলীয় একজন জনৈক মাননীয় সংসদ সদস্য আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবার কথা ছিল। সবাই উপস্থিত হবার কিছুক্ষন পর উক্ত মাননীয় অনুষ্ঠানে এসে যেন ভুত দেখার মত চমকে উঠে “হোয়াট হোয়াট, এটা কি এটা কি, হরিবল” ধরনের শব্দ প্রয়োগ করে নিজের এপিএসকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি জানতে কারা থাকবেন”। বেচারা এপিএস তাড়াতাড়ি না বোধক উত্তর দিয়ে নিজেকে তো বাঁচালেন কিন্ত উক্ত অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদদের বা উপস্থিত অতিথিদের বা সেই অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ওনার এলাকার ভোটারদের কি হরিবল জবাবদিহিতাহীন অবস্থায় ফেলে গেলেন সেটা তার মনে একবারও এসেছিল কিনা সেটা বুঝলামনা।

হরিবওওওওল!!!! অদ্ভুতুড়ে কথা। রাজনৈতিক অসম্পৃক্ত কিছু জনপ্রতিনিধি আসলে রাজনীতির রকেটে চড়ে বিদ্যুৎ গতিতে পৌঁছে গিয়েছেন চাঁদের দেশে। ওখানে বসে বসেই মধুচন্দ্রীমা উদযাপন করতে করতে ভুলেই গিয়েছেন দেশের কথা, দশের কথা। এমনকি কয়েকজন তো এতই আওয়ামীপন্থী হয়ে গিয়েছেন যে, তারা তাদের অতীতই ভুলে গিয়েছেন। ভুলে গিয়েছেন যে, ওনারা ১৯৭১ সালে মে মাসে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিশেষ বিবেচনায় যে সাতজন বাঙ্গালী পাকিস্তানের সরকারী চাকরীতে ঢুকেছিলেন সিএসপি অফিসার হয়ে, তারা তাদেরই বংশ। ভুলে গিয়েছেন যে, মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম যে ৭০ জন সরকারী চাকুরীজীবী পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু যাদের চাকুরিতে পুনর্বহাল করার ফাইল ফেলে দিয়েছিলেন, তারা তাদের বংশ। তাদের ভাই-চাচারা মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন, তারা তাদের বংশ। চাঁদের দেশে বসে তাদের কি সেসব কথা মনে পড়ে আদৌ।

ঐ লোকগুলো জানেই না ৭ই মার্চের ভাষণকে কেন ইউনেস্কো মার্টিন লুথার কিং এর সেই বিখ্যাত ভাষণ “আই হ্যাভ এ ড্রীম” বা আব্রাহাম লিংকনের “গ্যাটিসবার্গ এড্রেস” এর সমপর্যায়ে নিয়ে গেল। ঐ সব লিখিত ভাষণ আর বঙ্গবন্ধুর এই এক্সেটেম্পো ভাষণের গুনগত পার্থক্য যে মানুষের প্রতি ভালবাসার কথা, মানুষের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের কথা এবং ঐ হৃদয় নিসৃত কবিতার পংক্তি গুলো যে একটি জনগোষ্ঠীকে জাতি সত্ত্বা তৈরি করতে টেনে নিয়ে গিয়েছিল আলোর দিকে, সেটা কি দাসত্বের টানে বিশ্বাসঘাতকতায় উদ্বুদ্ধ ঐ প্রানীগুলোর বোঝার ক্ষমতায় কুলাবে। তারা নেতৃত্ত্ব বুঝবে কি করে আর ঐতিহ্য বুঝবে কি করে। সে কারনেই তারা তার দায়ীত্বপ্রাপ্ত এলাকায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেয়ে তাদের নিজস্ব অস্তিত্ত্ব রক্ষার্থে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সমর্থন দিয়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধি তৈরি করতে এগিয়ে যায়, অথর্ব এবং নিজ দলের সাথে সম্পর্কহীন কিছু মানুষ দিয়ে নিজস্ব জবাবদিহিতাহীন বলয় তৈরী করতে চায়।

আর একারনেই তাদের মনের ঝাল মেটায় সেই মানুষগুলোর উপর যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধ্বজাধারি, যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আগ্রহী।

এত হিংসা কেন মনে?? আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যের পতাকা বহন করে চলেছি তাদের প্রতি এত বিদ্বেষানল ঝাড়ার কারন কি?? ওনারা কি ভাবেন এই হিংসার আগুনে আমাদের পুড়িয়ে দেবেন। দুঃখিত জনাব, আমরা পুড়বো কিন্ত নিঃশেষ হব না, আমরা আপনাদের হিংসার আগুনে পুড়ে হয়ে উঠেছি আরো খাঁটি সোনা।

কি ভাবেন ওনারা??? ওনাদের দম্ভে আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাবো, বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকবো। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, দম্ভ আমাদের, কারন, ওনারা আর কখনোই একটা দেশের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হতে পারবেন না।

এত জ্বালা কেন মনে। ভাবছেন আপনাদের জ্বালাতনে অস্থির হয়ে আমরা আদর্শ্চ্যুত হয়ে যাবো। আদর্শ মানে বোঝেন কি ওনারা??? ওনারা তো আবার রাজনীতির মানুষ না। ওনাদের বোঝার সুবিধার্থে সহজ একটি উপমা দিয়ে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলি। টেলিভিশন সিস্টেমটা বোঝেন। সিস্টেম চালু থাকা অবস্থায় আপনার টেলিভিশন সেটটি ভেঙ্গে গেলেও যেমন টেলিভিশন সিগনাল থেমে যায় না, আদর্শও তেমনই একটি বিষয়। মানুষকে ভালবাসার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করবার, আর দেশকে গড়ে তুলবার যে আদর্শ আমরা ঐতিহ্যগতভাবে ধারন করে চলেছি উত্তরাধিকারসুত্রে, সেটা তো আমার পিতার বা জাতির পিতার মৃত্যুর কারনে থেমে যাবার নয়।

এইসব প্রানীগুলোকে আমার ধিক্কার জানাবার ভাষা নেই। তবে জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও নিজের ভোটারের কাছে জবাবদিহিতার সাহস নেই যাদের তাদের জন্য আমার এলাকার একটা গল্প বলে যাই। আমাদের একটি স্থানীয় প্রবাদ আছে, “কার্তিক মাইয়া দিনে নাও টানার চেয়ে পাও টানা কষ্ট”। বর্ষার শেষে কার্তিক মাসে যখন আমার ভাটি অঞ্চলের হাওরগুলোর পানি নেমে যায়, তখন কোমর সমান কাঁদার উপর দিয়ে নৌকা টেনে নিয়ে যেতে হয় অনেকটা পথ। বেশ কষ্টসাধ্য বিষয় হলেও ঐ কোমড় সমান কাঁদায় নৌকা টানার চেয়ে নিজের পা টেনে চলাটা অনেক দুঃসাধ্য রকমের কষ্টকর।

হরিবলেরা সাবধান। কার্তিক মাস সামনে। নিজের পা চালাতেই যার এত কষ্ট, তারা আবার নাও চালাবার আশা নিয়ে বসে আছে কিভাবে জানি না।

(লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া)

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *