শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জাসহ আটটি স্থানে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা জোরালো হয়ে উঠেছে। এরইমধ্যে বন্দর শহর নেগোম্বো ছেড়ে পালিয়ে অন্য শহরে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক শ’ মুসলিম। তারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাদেরকে তাড়াতে বিক্ষোভ চলছে সেখানেও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
রবিবার (২১ এপ্রিল) খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫৯ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি। রবিবার যে তিনটি গির্জায় হামলা হয়েছে তার মধ্যে নেগোম্বো শহরের সেন্ট সেবাস্তিয়ান চার্চ একটি। সেখানে নিহত হন শতাধিক মানুষ। এ হামলার পর নেগোম্বো শহরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিরাজ করছে। আতঙ্কে রয়েছে মুসলিমরা। প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাসে করে নেগোম্বো শহর ছেড়েছেন কয়েকশ’ পাকিস্তানি মুসলিম। এ গ্রুপটি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের। নেগোম্বো ছেড়ে পালাতে বাসে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আদনান আলি নামে এক পাকিস্তানি মুসলিম। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘এখানে বোমা বিস্ফোরণ হওয়ার পর স্থানীয় শ্রীলঙ্কান জনগণ আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে।’
প্রায় ৮০০ জন মুসলিম নেগোম্বো থেকে পালিয়ে একটি শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সে শহরটির নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থেকেছে গার্ডিয়ান। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পালিয়ে আসা ওই মুসলিমদের নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পুলিশ সেখানে অবস্থান নিয়েছে। পালিয়ে আসা ওই মুসলিম দলটিকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় এক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বলেন, ‘এসব মানুষকে অবশ্যই এখান থেকে তাড়াতে হবে। আমরা তাদেরকে এখানে দেখতে চাই না।’
বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারে ইংরেজি ও সিংহলি ভাষায় লেখা হয়েছে ‘পাকিস্তানি শরণার্থীদেরকে আমরা চাই না।’ পুলিশ বলছে, নিরাপদে অন্য জায়গায় যেতে হলে ওই শরণার্থী দলটিকে আরও কয়েকদিন সেখানে থাকতে হবে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘু খ্রিস্টান, মুসলিম ও হিন্দু মিলিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের বসবাস। হামলার পর গির্জাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেগুলো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ এক যাজক ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনও ধরনের ধর্মীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে না।’ রবিবারের হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই শ্রীলঙ্কান নাগরিক। তবে নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন বিদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি, ব্রিটিশ, মার্কিন, তুর্কি, ভারতীয়, চীনা, ড্যানিশ, ডাচ ও পর্তুগিজ নাগরিক।
বার্তা বিভাগ প্রধান