৩ এপ্রিলকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) এবং চলচ্চিত্রের মানুষেরা একসঙ্গে দিনটি বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করে আসছে। কিন্তু এবার জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠান শুরুর আগেই চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্টরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে তাঁরা সেই অনুষ্ঠান বর্জন করবেন। আজ মঙ্গলবার সকালে বিএফডিসিতে আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানে তা দেখা গেছে। বিএফডিসির অভ্যন্তরে দুটি পৃথক স্থানে আলাদা আলাদা মঞ্চ তৈরি করা হয়। আর সরকারিভাবে আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানে শিল্পীদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
সকাল ১০টায় বিএফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে তৈরি মঞ্চে তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিএফডিসির পক্ষ থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ, সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, তথ্যসচিব আবদুল মালেক, বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও চিত্রপ্রযোজক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু, গুণী অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া, পূজা চেরী, চিত্রনায়ক রোশান প্রমুখ।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে যেভাবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেভাবে চলচ্চিত্রও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবার চ্যালেঞ্জ ছিল আধুনিক প্রযুক্তি রপ্ত করা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিনেমা নির্মাণ ও প্রদর্শন করা। চ্যালেঞ্জ ছিল জঙ্গি-সন্ত্রাস থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে উদ্ধার করা। এসব চ্যালেঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরে ডিজিটাল এফডিসিতে পরিণত হয়েছে এফডিসি। যেসব সমস্যা এখনো আছে, তা শিগগিরই সমাধান করা হবে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে বিএফডিসির পক্ষ থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি বিএফডিসির সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ ছাড়া বিএফডিসিতে দিনব্যাপী টক শো, সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর এফডিসির ঝরনা স্পটের সামনে তৈরি মঞ্চে চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি তাদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে। এখানে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, বরেণ্য অভিনেতা ফারুক, গুণী অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, চিত্রনায়িকা পপিসহ আরও অনেকে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, চলচ্চিত্র আমাদের, এ দেশের মানুষও আমাদের। আজ আমরা যেভাবে একত্র হয়েছি, এই বন্ধন যেন অটুট রাখতে পারি।’
এ টি এম শামসুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে সবার উদ্দেশে একটা কথা বলব, ভালো ছবি বানানোর জন্য সরকার যে টাকা দেয়, এই টাকা দিয়ে কোনো দিন ভালো ছবি বানানো যায় না, লুডু খেলা যায়। চলচ্চিত্রের জন্য টাকা লাগে। এই টাকা আপনারা নানাজনকে ভাগ করে দিচ্ছেন। এই টাকা হচ্ছে চলচ্চিত্রের ফিতরা। এই ফিতরা দিয়ে কেউ ধনী হতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, এই চার কোটি টাকা আপনি দুজনকে ভাগ করে দিন।’
চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক বরেণ্য চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র মরেনি। আমাদের চলচ্চিত্রকে মারতে চায়, আমরা মরতে দেব না।’
সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, চলচ্চিত্র নির্মাণে আপনি যে টাকা দেন, তা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না, ঠিকভাবে তদারকি করবেন। সবাইকে বলতে চাই, আমরা এই চলচ্চিত্রের জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে পারি।’
এদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি বরেণ্য অভিনেত্রী ববিতা। তবে বিএফিডিসিতে চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে শিল্পী ও কলাকুশলীদের দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার ব্যাপারটিতে কষ্ট পেয়েছেন তিনি। ববিতা বলেন, ‘আমার ঘরের মধ্যে কী সমস্যা আছে, তা জনসমক্ষে বলার কী দরকার? নিজেদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে একসঙ্গে বসে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। শুনেছি, কিছু শিল্পী ভারতীয় ছবি আমদানিসহ নানা বিষয়ে তাদের মতামত দিয়েছে। দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিরা এসব আমলে নিলে কিন্তু সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি হতে পারে, যা সবার কাছে অনুসরণীয় হতে পারে।’
নির্বাহী সম্পাদক