বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। বাঙালির সার্বজনীন উৎসবও এটি। আবেগ আর উচ্ছ্বাসে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় বাঙালি। আর একদিন পরই নতুন বছরের প্রথম দিন। পহেলা বৈশাখ। নববর্ষকে বরণ করতে সিলেটজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। নেওয়া হয়েছে নানা আয়োজন।স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি বেসরকারি অফিস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জোরেশোরে চলছে বৈশাখের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নববর্ষ উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতি বছরের মতো এবারও নববর্ষের সবচেয়ে বড় সমাগম ঘটবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমসি কলেজে। বর্ষবরণ উৎসবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এই দুটি প্রতিষ্ঠানও। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে বর্ষবরণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। সকালে সম্মিলিতভাবে আয়োজিত হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
সিলেটে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কথা আসলেই উঠে আসে আনন্দলোকের নাম। এবারও এই সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ মাঠে আয়োজন করেছে বর্ষবরণ উৎসবের। সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নাচে-গানে আনন্দলোক মাতিয়ে রাখবে সংস্কৃত কলেজ প্রাঙ্গণ। পাশেরই ব্লু বার্ড স্কুল মাঠে প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শ্রুতি। সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজনকে সফল করতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে সংগঠনটি।
পহেলা বৈশাখের বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে উদীচী।সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হবে। মঙ্গলশোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কলাকুশলী সবাই খুব ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। শেষ মুহূর্তে স্টল সাজসজ্জায়ও কাজ করছেন সবাই।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল খলিলুর রহমান বলেন, ‘বৈশাখকে বরণ করতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে ক্যাম্পাসে। প্রাণের উৎসবকে বরণ করতে সবাই প্রাণ লাগিয়ে কাজ করছেন। সবই প্রস্তুত, এখন শুধু বৈশাখের অপেক্ষায় আছি আমরা।’বাংলা নতুন বছরকে বরণ করতে সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরাও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন। শুধু বৈশাখ বরণ নয় চৈত্রকে বিদায় জানাতে প্রস্তুতি চলছে সাংস্কৃতিক কর্মীদের।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করেত সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নৃত্যশৈলী আয়োজন করেছে ‘শেষ বিকালের রং’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে নৃত্যশৈলীর নিয়মিত পরিবেশনার পাশাপাশি থাকবে লোকজ ধারার নাচ।নৃত্যশৈলীর পরিচালক নিলাঞ্জনা জুই বলেন, পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে ও নতুন বছরকে বরণ করতেই আমাদের এই অনুষ্ঠান। বড় আয়োজন তাই প্রস্তুতিও বেশি। আমাদের শিল্পীরা সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। এখন শুধু চূড়ান্ত পরিবেশনার অপেক্ষা।
এদিকে লিডিং ইউনিভার্সিটি এবার বৈশাখ উপলক্ষে মেলা, বাউলগান, পুতুল নাচ, সাপ খেলা, বানর খেলা, জাগলিং, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, আনন্দ শোভাযাত্রা, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের প্রদর্শনীসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল ক্লাবের উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়েছে।
লিডিং ইউনিভার্সিটি কালচারাল ক্লাবের সভাপতি এস এইচ নিরব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আয়োজন করতে যাচ্ছি আমরা। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে আছে। এবারের বৈশাখী মেলায় বাউলগান, পুতুল নাচ, সাপ খেলা, বানর খেলাসহ নানা আয়োজন থাকবে আমাদের বৈশাখের অনুষ্ঠানে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিবেশনায় থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে আমাদের বৈশাখের আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের প্রদর্শনী। এজন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আমরা গরুর গাড়ি, মই, লাঙলসহ হারিয়ে যাওয়া অনেক জিনিস সংগ্রহ করেছি। আমাদের এই বৈশাখের আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সকলের উপস্থিতি আমাদের আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করবে।
নববর্ষ উপলক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকায় আয়োজন করা হয়েছে সপ্তাহব্যাপী মেলার। এছাড়া প্রতিবারের মত সিসিক এবারও বছরের নতুন সূর্যকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখ সকাল ৯ টায় নগরীতে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করবে।এছাড়া সকাল ১০ টায় নগর ভবনে শিশু কিশোরদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে সপ্তাহ ব্যাপী ঐতিহাসিক সারদা হলের সামনে শুরু হবে বৈশাখী মেলা। এসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
প্রতিনিধি