ডেস্ক নিউজ :বাংলায়াদেশে এই প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ উপলক্ষে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা যাচ্ছেন।
এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ব্যাপারে শুরু থেকেই যুক্ত থাকায় বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের বদলে তাকে পাঠানো হচ্ছে হলে জানা গেছে। এই স্যাটেলাইটের তহবিল থেকে তাদের যাবতীয় খরচ বহন করা হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে অনেকে যাবেন।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইচ টিপে উদ্বোধনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হবে।
এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১’ ২৪ এপ্রিল উৎক্ষেপণ হতে পারে। তবে এটি উৎক্ষেপণের বিষয়টি আবহাওয়াসহ নানা বিষয়ের জড়িত থাকায় চূড়ান্ত সূচি সম্পর্কে কিছু জানা যাচ্ছে না। তাই তারানা হালিমের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ২১ এপ্রিলে সেখানে উড়াল দিতে পারেন। তাদের এই সফর হবে চার দিনের।
প্রতিনিধি দলে থাকছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ। তিনি বলেন, মন্ত্রী তারানা হালিম শুরু থেকেই এই স্যাটেলাইট উৎপক্ষেপণের সঙ্গে জড়িত। এখন তার মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হয়েছে। তবুও হয়তো তাকে সম্মান জানিয়ে রাখা হয়েছে।
এই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ ডেপুটি পরিচালক শিবলি ইমতিয়াজ । তিনি বলেন, ২১ এপ্রিল এই প্রতিনিধি দলের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
এই প্রতিনিধি দলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এরই মধ্যে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়েছে। প্রায় ২১৯ কোটি ব্যয়ে মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় ১৫ বছরের জন্য এই কক্ষপথ কেনা হয়েছে।
স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এ জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে; যা নিয়ন্ত্রণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের যন্ত্রপাতিও আমদানি করেছে বিটিআরসি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। আর ঋণ হিসেবে এইচএসবিসি ব্যাংক বাকি ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা দিচ্ছে।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের নির্দিষ্ট তারিখ আগে থেকে বলা সম্ভব হয় না।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য রাখা হবে।
এই কৃত্রিম উপগ্রহ স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল থাকা, পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ই-সেবা নিশ্চিত করবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
স্যাটেলাইটের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হলে আশপাশের কয়েকটি দেশে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দেয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেমের (৪০ ট্র্যান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্র্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড) গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে।
দেশের টিভি চ্যানেলগুলো স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই স্যাটেলাইট চালু হলে সে টাকা এখন থেকে দেশেই থেকে যাবে। একই সঙ্গে এই স্যাটেলাইটের তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে।