সম্প্রতি ব্রুনাইয়ে শরীয়াহ্ আইন চালু করেছেন দেশটির সুলতান হাসানাল বোলখিয়া। কিন্তু সম্পদশালী এই সুলতানের রাজপ্রাসাদেই রয়েছে একাধিক হেরেম (রাজকীয় পতিতালয়)। যেখানে বিশ্বের নানা দেশ থেকে আনা হয়েছে সুন্দরী যৌনদাসীরা। এসব নিয়ে শুধু খবর নয়, লেখা হয়েছে অনেক বই। ব্রুনাই রাজপ্রাসাদের হেরেমে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১০ সালে ‘সাম গার্লস : মাই লাইফ ইন হেরেম’ শিরোনামে একটি বই লেখেন মার্কিন লেখিক জুলিয়ান লরেন। বইটি নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার নির্বাচিত হয়েছে। বইটি সম্পর্কে টওয়ানা এ হাইনসের নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ প্রকাশ করা হলো।
লিখতে গিয়ে মানুষ প্রায়ই ব্যক্তিগত নিরীক্ষার সাথে জীবনে চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি গুলিয়ে ফেলে। আমি কি ঠিক বললাম?
—আমার অভিজ্ঞতা সেটাই ছিলো। এই বইয়ে অনেক সেক্সুয়াল বিষয় আছে, যেসব ব্যাপারে মানুষ আমাকে বরাবরই জিজ্ঞাসা করেছে। তবে পড়ার পর অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, আমি একজন মেধাবী লেখক। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা হয়তো বলতে চেয়েছিলেন, ‘আমি বিস্মিত’!
আমি ‘স্ট্রিপ সিটি’র লেখক লিলি বুরানার সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, সেখানে (ব্রুনাইয়ের রাজপ্রাসাদে) তুমি কুকুরের মতো ব্যবহৃত হয়েছো। একদিন ঠিকই কুকুরটি কথা বলা শুরু করলো; নগ্ন মানুষটি লিখতে শুরু করলো। আর সেটাই তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বছরের পর বছর পরিশ্রম করে আমি বইটি লিখেছি। সব মিলিয়ে এটা একটা দারুণ গল্পও।
এই বইয়ের কারণে আপনি অনেক খ্যাতি পেয়েছেন। এতো অসাধারণ লিখলেন কিভাবে?
—আমি আসলে একঘেয়েভাবে আমার গল্প লিখে গেছি। লিখে গেছি যা যা ঘটেছে। এক রকম ভূতের মতো লেখা বলতে পারেন। এটা খুবই নারী বিদ্বেষী বই। কারণ একজন নারী এবং যৌনকর্মী হিসেবে আমি যেসব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি তার সমস্তটাই ছিলো নারী বিদ্বেষে ভরা। আমি লিখেছি একজন নারী হিসেবে। জানি না আমি কোনো মেধাবী লেখক কি না।
আপনার বইয়ের নাম ‘সাম গার্লস : মাই লাইভ ইন এ হেরেম’। টাইটেলে ‘সাম গার্লস’ দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছি, রোলিং স্টোং ব্যান্ডের জনপ্রিয় একটি গানের নাম ‘সাম গার্লস’। সম্ভবত আপনি সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে নামটি রেখেছেন, গানের বিষয় আর আপনার বইয়ের কিছু বিষয়ের মিলও রয়েছে।
—ওই গানের সাথে আমার কাহিনীর বেশ কিছু সঙ্গতি রয়েছে। আমি মনে করি শিল্পীরা এভাবে প্রকাশ করে নিজেদের। তবে এটা শুধুমাত্র অর্থের দিক থেকে কিছুটা এক। আমার কাছে ‘সাম গার্লস’ শব্দটি হাজির হয়েছে জোর করে উত্তেজিত হওয়া বেশ কিছু নারীর মুখচ্ছবি থেকে। তবে রাজনৈতিকভাবে হিসাব করলে আমি বলবো, আপনারা ভুল গান সম্পর্কে ভাবছেন। তবে এটি এমন একটি গান যেখানে নারীদের সঙ্গে একটি মানুষ সম্পর্কে অবিরাম বলা হচ্ছে। ওইদিক থেকে মূল্যায়ন করলে প্রিন্স জেফরিকে মনে হবে নিতান্তই সহজ এবং সমান্তরাল একজন মানুষ। সে কারণে ওই গানের সাথে আমার বইয়ের তুলনা করা ঠিক হবে না। আমি মনে করি, আমার বই চিরায়ত কোনো ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে এসে সারা পৃথিবীর কথা বলছে। এর স্থান নির্দিষ্ট নয়।
বই লেখার জন্য ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা আপনাকে কি প্রভাবিত করেছে?
—এই বইটি লিখেছি নিজেই নিজেকে সহানুভূতি দেয়ার জন্য। আমার কাছে প্রেমের সার্বজনীন প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দেয়ার এটা ছিলো একটি উপায়।
আপনি যখন ব্রুনাই সম্পর্কে কথা বলেছেন, তখন আপনি প্রায় সব কিছুই খোলাখুলি উল্লেখ করেছেন। আপনি তাদের সম্পর্কে যা বলেন তা কি পরিকল্পনামাফিক বলা, না কি এলোমেলোভাবে বলেছেন?
—একদমই তা নয়, আমি ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করিনি। যা যেমন করে ঘটেছে তা তেমন করে লিখেছি। তবে একটা কথা না বলে পারছি না, আমি চাই যারা আমার বইটা পড়েছেন, পড়ার পর তাদের কেমন লেগেছে, তারা সেটা বলুক। বইটি কোন কোন নির্দেশনা মেনে লেখা হয়েছে সেটা না জেনেই।
এই স্মৃতিকথাগুলো লিখতে গিয়ে, আপনি কি নিজের সম্পর্কে সমান্তরাল কোনো পথ খুঁজে পেয়েছেন যে, আপনি কি হতে চেয়েছিলেন আর কি হয়েছেন?
—অবশ্যই, যে জীবন আমি এখন যাপন করছি সেই জীবনটা আমি যেমন চেয়েছিলাম সেটা থেকে একদমই আলাদা। যদিও সেই আগের মতো এখন আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। তবে এটা নয় যে, আমার কাছে শেষ পর্যন্ত আমার জীবনের কোনো মানে নেই, অথবা আমি বিপথগামী। আমি মনে করি পৃথিবীতে অনেক মানুষই আছেন যারা কখনই সন্তুষ্ট হতে পারেন না। আমার কাছে এটা কোনো ব্যাপার নয় যে, আমি জীবন থেকে কী পেলাম। কিন্তু আমি যা পাচ্ছি তা অবশ্যই বিশেষ বা আলাদা কিছু হতে হবে, এটাই আমার প্রত্যাশা। আমি অন্তত আধ্যাত্মিকভাবে জানি যে, অসন্তুষ্টি ভিতর থেকে আসে না, বাইরে থেকে আসে। আমার জীবন এখন অসাধারণ, তারপরও কিছু কিছু সময় দুঃখ তো থাকেই।
আপনার বইয়ের প্রথম দিকে আপনি লিখেছেন, ‘এ জীবন এমন এক যাপন যেখানে মিথ্যা বলার নেই’। আপনার বইটি নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার নির্বাচিত হয়েছে। হাজারো লোক পড়েছে। আপনি মূলত কোন জীবনকে বুঝিয়েছেন যেখানে মিথ্যা বলার নেই?
—খুব ভালো প্রশ্ন। এই লাইনটা কোট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি ঘটে যাওয়া জীবন আর বই লেখার সময়ের কথা বলেছি। কারণ আমি এই স্মৃতিকথাটি লেখার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। সত্যিই অনেক চিন্তা করেছি। অনেক প্রতিক্রিয়া এবং নেতিবাচক কথা শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি। কিন্তু বইটি প্রকাশ হওয়ার পর যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি তা আমার প্রত্যাশার থেকেও অনেক বেশি পজেটিভ।
কিন্তু এখন আমি এক ধরণের রূপান্তরের মধ্যে আছি। আমি এখন একই সাথে লেখক এবং মা। এই জীবন আগের থেকে আরো শান্ত এবং কাঠামোগত। আমি যে সমস্ত উন্মুত্ততা দেখেছি, যে সমস্ত কিছু আমার সাথে ঘটেছে, তার বিপরীতে আপনার জীবন সম্পর্কে একটি বই ছাড়া আমি কিছুই করতে পারতাম না। আমি একটি জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছি যেখান থেকে মুক্তির অভিজ্ঞতার বিষয়ে মিথ্যা বলার ছিল না।
আপনি নারীদের জীবন সম্পর্ক লিখেছেন, মুষ্টিযুদ্ধের চেয়ে মারাত্মক এবং ড্রাইভ-শ্যুটিংয়ের চেয়ে নিষ্ঠুর। নারীরা একজনের ক্ষত আরেকজন টের পেতে পারে কারণ নারীদের একে অপরের আত্মা সরাসরি যুক্ত। এসব কথা আপনি কীভাবে লিখলেন?
—আমি এখন আমার দুই ছেলের সাথে বসবাস করছি। আমার স্বামীও আমার সাথে বাস করে। আমি খুব কাছ থেকে দেখছি তাদের জীবন। আমার কাছে মনে হয়েছে পুরুষের জীবন নারীদের থেকে বেশি সহজ। সংক্ষেপিত
বার্তা বিভাগ প্রধান