Home » অটিস্টিক শিশুদের জন্য অন্তঃপ্রাণ এক প্রধানমন্ত্রী

অটিস্টিক শিশুদের জন্য অন্তঃপ্রাণ এক প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক নিউজ :

অটিস্টিক শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটি সুপরিচিত নাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী সায়মা হোসেন পুতুল সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশ্বে একটি বড় স্থান করে নিয়েছেন। অটিজম বিষয়ে ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও তার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে-বিদেশে সবখানেই অটিস্টিক শিশুদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন।
মমতাময়ী শেখ হাসিনা অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে আয়োজিত যে কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রটোকল ভেঙে নিজেই ছুটে যান তাদের কাছে। মায়ের স্নেহে বুকে তুলে নেন এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের। শোনেন তাদের কথা, সুর মেলান তাদের কণ্ঠে। গত কয়েক বছরে তার কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে তিনি অটিস্টিক শিশুদের জন্য অন্তঃপ্রাণ।
অটিজম এটা স্নায়ুগত সমস্যা। একে ইংরেজিতে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বলে। অটিজমকে সাধারণভাবে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অটিজমে আক্রান্তদের বলা হয় অটিস্টিক। তবে তাদের বিশেষ যত্ন নিলে তারা আর দশটা শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে। অটিজমে আক্রান্ত কোনও কোনও শিশু কখনও কখনও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শীতা দেখাতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এ দিবস পালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে অটিস্টিক বিষয়টিকে এজেন্ডা হিসেবে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি উৎসাহ পেয়েছেন মেয়ে সায়মা হোসেনের। বিষয়টি তিনি অকপটে স্বীকারও করেছেন অনেকবার।
সোমবার ( ২ এপ্রিল) অটিজম দিবসে অনুষ্ঠানসহ এর আগে একাধিক অনুষ্ঠানে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম বিষয়ে একসময় আমারও ভালো ধারণা ছিল না। আমার মেয়ে পুতুল এসব বিষয় নিয়ে আমেরিকায় লেখাপড়া করেছে। আমি জেনেছি তার কাছ থেকে। অটিজম বিষয়ে আমি পুতুলের কাছ পরামর্শ নিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, পুতুলের উদ্যোগের কারণেই অটিস্টিক শিশুদের লুকিয়ে রাখার মানসিকতা থেকে অভিভাবকরা আজ বেরিয়ে এসেছেন এবং জাতিসংঘও এ বিষয়ে একটি রেজুলেশন পাস করেছে।
প্রসঙ্গত, সায়মা হোসেন পুতুল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত আছেন। ডাব্লিউএইচও ২০১৪ সালে তাকে অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি বর্তমানে অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন ও ডাব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন ও ডাব্লিউএইচ’র শুভেচ্ছা দূত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতিবছর বিশ্ব অটিজম দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেন। প্রতি বছরই এই দিবসের অনুষ্ঠানে অটিস্টিক শিশুদের সঙ্গে যতটা সম্ভব সময় দেন। তিনি শোনেন তাদের মনের কথা। দেখেন তাদের হাতে আঁকা ছবি, শোনেন তাদের গান। অটিস্টিক শিশুদের সব সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দেন। এমনকি নিজেও কণ্ঠ মেলান তাদের সঙ্গে। অনুষ্ঠানে গিয়ে মায়ের মমতায় কাছে টেনে নেন এই অবুঝ শিশুদের। এমনকি প্রটোকল ভেঙে নিজেই এগিয়ে যান তাদের কাছে। সোমবারের অটিস্টিক দিবসের কর্মসূচিতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
অটিস্টিক দিবস ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা তোলেন, বলেন তাদের অধিকারের কথা। অটিস্টিক শিশুদের জন্য বর্তমান সরকার যে বিশেষ কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন, তা তুলে ধরেন সবার সামনে।
বর্তমান সরকার অটিস্টিক শিশুদের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— তাদের জন্য ট্রাস্ট গঠন, বিভাগীয় পর্য়ায়ে তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা, চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইন্সিটিটিউট চালু, বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপিসহ চিকিৎসা দিতে ৬৪ জেলায় ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্র স্থাপন, রাস্তা-ঘাট, ফুটপাত ও নতুন অবকাঠামোতে প্রতিবন্ধীদের সহজে চলাচলের জন্য পৃথক লেন, তাদের উপযোগী টয়লেট তৈরি ইত্যাদি। এছাড়া সরকার অটিস্টিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলা, স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে তাদের শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোসহ নতুন কিছু পদক্ষেপও হাতে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ, নববর্ষসহ বিভিন্ন পার্বণ ও দিবসে যেসব শুভেচ্ছা কার্ড পাঠান, সেগুলো তিনি অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে ছাপেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা কার্ড ছাপছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে। যাদের কার্ড তিনি বেছে নেন তাদের উপযুক্ত সম্মানী দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সম্মাননাপত্রসহ এক লাখ করে টাকা দেন বলে সোমবারের অনুষ্ঠানে জানান শেখ হাসিনা।
এসব শুভেচ্ছা কার্ডের ছবিসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অটিস্টিট শিশুদের আঁকা ছবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুলের সম্পাদনায় আর্ট বুক ‘ইউনিক গ্লিম্পসেস‘ গত বছর প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বই বিক্রি করে পাওয়া অর্থ অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।
বর্তমানে অটিজম বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি, জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং কারিগরি নির্দেশক কমিটির মাধ্যমে সমন্বিতভাবে অটিজম সচেতনতা, দ্রুত চিহ্নিতকরণ, সেবা ও পুনর্বাসনে কাজ চলছে। এজন্য ১৩টি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *