বাংলাদেশ একটা হুলুস্থুল টাইপের আবিস্কার করে বসেছে! সেটি হচ্ছে পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প তৈরি করা। এই শপিং ব্যাগের নাম ‘সোনালী ব্যাগ’।
সারা বিশ্বে পলিথিন একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বিভিন্ন দেশে পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষিত হচ্ছে। এই সময় পরিবেশ বান্ধব একটি ব্যাগ দিতে পারলে এটাই হতে পারে আমাদের রফতানি খাতের সবচাইতে বড় আয়ের একটি।
এই কোটি কোটি টাকা দামের জিনিসটার মেধাসত্ত্ব বা প্যাটেন্ট এর মালিক, সোনালী ব্যাগের আবিস্কারক বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান। তিনি বিদেশে গবেষণার চাকুরি ফেলে এই দেশে ফিরে এসেছিলেন পাট নিয়ে কাজ করতে। তাঁর পরিশ্রমে এই আবিস্কার। তিনি এই মেধাসত্ত্ব নিজের জন্যও রাখতে চান না, বাংলাদেশের জনগনের জন্য উৎসর্গ করে সরকারকে প্যাটেন্টটি দান করে দিতে চান।
এখন একটা ছোট্ট পাইলট কারখানা তৈরি করে ‘ট্রায়াল এন্ড এরর’ পদ্ধতিতে অপারেশন প্রসেসটি মাস প্রোডাকশনের জন্য টিউন করতে হবে। দুনিয়ার সব নতুন আবিস্কারের জন্যই এটা প্রয়োজন। ছোট কারখানা করে সেখানে উৎপাদনে গিয়ে দেখা যায় যে কী কী ভুলচুক হতে পারে, সে অনুযায়ী জিনিসটা ঠিকঠাক করে প্রোডাকশনে যাওয়া হয়।
তো, এই পাইলট কারখানাটির যন্ত্রপাতির জন্য মাত্র ২ কোটি টাকা লাগবে। মোবারক আহমদ খান গত ১ বছরে এই ২ কোটি টাকাই পাচ্ছেন না। সরকারের ফাইল উপরে উঠে আর নিচে নামে, উপরে উঠে আর নিচে নামে। এ যেন ২ টাকার খুদ খাওয়াতে না পেরে সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে বসিয়ে রাখার মতো ব্যাপার।
গতরাতে টকশো শেষে আমি আর বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান এক গাড়িতে ফিরছিলাম। তাঁর কণ্ঠের বেদনা আমাকে সেই গভীর রাতে আপ্লুত করে। নীরব রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা গাড়িতে আমি আর মোবারক আহমদ খান চুপচাপ বসে থাকি। তাঁর চোখে যাতে চোখ না পড়ে, এজন্য আমি মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাই। সেখানে ফেসবুকে ‘পাটমেলা’র ছবি শেয়ারের হুড়োহুড়ি।
আমি মনে মনে ভাবি, এই পাটমেলার বাজেট কত? দুই কোটি টাকার চাইতে বেশি নাকি কম?
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)
আরিফ জেবতিক: লেখক, সাংবাদিক।
নির্বাহী সম্পাদক