প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে কোনো চেয়ারম্যান নেই। তাই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বোর্ডে কর্মরত প্রায় সাড়ে চারশ’র বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন আটকে গেছে তাদের। আকস্মিকভাবে বেতন বন্ধের শিকার হওয়ায় চরম বিপদে পড়েছেন তারা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান গত ৪ ফেব্রুয়ারি এ বোর্ড থেকে বিদায় নেন। ৭ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান তিনি। বোর্ডের সচিব মো. মাহবুবুর রহমান কোনোরকমে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে সারাদেশে একটিই মাত্র বোর্ড। চেয়ারম্যান পদটি বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর পদ হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ নানা সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো স্থগিত রাখা হচ্ছে এখন। বোর্ডে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও আটকে গেছে। বোর্ড সচিবের দপ্তর থেকে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে কর্মকর্তা রয়েছেন ৭৮ জন। স্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন ৫২ জন। এর বাইরে অস্থায়ীভাবে দৈনিক হাজিরাভিত্তিতে (মাস্টাররোলে) কাজ করছেন আরও সাড়ে তিন শতাধিক কর্মচারী। তাদের সবারই বেতন বন্ধ রয়েছে। মাস্টাররোল কর্মচারীরাও তাদের দৈনিক হাজিরার অর্থ পাচ্ছেন না। একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার মেয়ের পাবলিক পরীক্ষা চলছিল।
গতকাল তা শেষ হয়েছে। তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর মতো টাকাও ঘরে ছিল না আমার। ধার-কর্জ করে চলছি আমি।’
একাধিক কর্মকর্তা জানান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়া বেতন তোলা যায় না, এ কারণে বেতনের অর্থ তুলতে ফাইল পাস না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, চেয়ারম্যান ছাড়া বোর্ডের সকল সিদ্ধান্ত, নীতিনির্ধারণ ও অর্থ-সংক্রান্ত কোনো ফাইল পাস না হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রায় অচল অবস্থায় আছে শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম। বর্তমানে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সকল কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন বোর্ডের সচিব। কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ ছাড়াও সারাদেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, অনুমোদন, স্থাপন, পাঠদানের অনুমতি প্রদান, স্বীকৃতি প্রদান, কারিকুলাম অনুমোদন ও প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়নের কাজ করে থাকে এ বোর্ড।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত, সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। চেয়ারম্যান না থাকায় আমাকে বোর্ডের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ফাইলে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়া অর্থ তোলা যায় না। তাই এ পদটি শূন্য থাকায় বোর্ডের বেতন পাস করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি।’ দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বোর্ডের সচিব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদে নিয়োগ পেতে নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন আগ্রহীরা। তবে এর মধ্যে শীর্ষে আছেন সরকারি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষকরা। আইনে সুযোগ থাকায় এবার সক্রিয় হয়েছেন বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরাও। এ ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের দু-একজন কর্মকর্তাও আগ্রহী বলে জানা গেছে। তবে সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে পাঁচজনের একটি প্যানেল প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্যানেলে আছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) ড. নুরুল ইসলাম, পরিচালক (আইসিটি) মীর মোশাররফ হোসেন, কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের (টিটিটিসি) অধ্যক্ষ অধ্যাপক রমজান আলি, বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহাদত হোসেন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুস সরদার। এর বাইরেও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষক সংগঠনের নেতা অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার ও অধ্যক্ষ মো. শাজাহান আলম সাজুর নামও নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে।
এদিকে, চেয়ারম্যান ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা থাকলেও আগামী ১৪ মার্চ এ বোর্ডের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। নির্ধারিত দিন ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শেষ করা হবে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যান ছাড়া কোনোভাবেই এমন মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হয়নি। কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন করার অনুমোদন দেওয়া কোনোভাবেই রুটিন ওয়ার্ক নয়। কারিগরি বোর্ডের ইতিহাসে আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। বর্তমান সচিবের একক সিদ্ধান্তে এ নির্বাচনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব মাহাবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের জন্য একক অনুমোদন দেওয়ার আমি কেউ না, তারা (শ্রমিক নেতৃবৃন্দ) ট্রেড ইউনিয়ন থেকে অনুমোদন নিয়ে এসেছে। এ কারণে নির্বাচনের জন্য সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক