Home » শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুপারিশ বিশ্বব্যাংকের

শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুপারিশ বিশ্বব্যাংকের

বাংলাদেশের শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, এ খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়ালেখা ও সাধারণ অঙ্ক করার উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন না করায় এদেশের অনেক যুবক শেষ পর্যন্ত মানসম্পন্ন কাজ পায় না। অবশ্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে স্কুলগামী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেছে সংস্থাটি।

বুধবার ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।

‘বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৮: শিক্ষার প্রতিশ্রুতি বোঝার শিক্ষা’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। বড় কারণের মধ্যে রয়েছে— মানহীন পাঠদান, স্কুল ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, সরকারি খাতের শিক্ষায় স্বল্প বরাদ্দ ও শিশুর বিকাশমূলক কর্মসূচির অভাব। এসব সমস্যা সমাধানে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো এবং বিনিয়োগের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে সবকিছুর আগে এই সংকটকে যথাযথভাবে শনাক্ত করার কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, শিক্ষার উন্নয়ন সরকারের এক নম্বর এজেন্ডা। গত ৮ বছরে এ খাতের বরাদ্দ ৫ গুণ বাড়ানো হয়েছে। এ খাতে সরকারের বিনিয়োগ ও মান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। তবে মানের দিক থেকে শিক্ষা খাতে পিছিয়ে থাকার কথা স্বীকার করেন প্রতিমন্ত্রী। এ জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে শিক্ষক নিয়োগে ব্যবস্থাপনা কমিটির হস্তক্ষেপকে দায়ী করেছেন তিনি।

প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হেলসি রজার্স, সংস্থার শিক্ষা বিষয়ক ব্যবস্থাপক ক্রিস্টিয়ান এইডো।

এতে বলা হয়, পড়াশোনায় দুর্বলতার কারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ১১ বছরের শিক্ষাজীবনে আন্তর্জাতিক মান থেকে এ দেশের শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে সাড়ে চার বছর পিছিয়ে থাকে। প্রতিবেদনে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, যাচাইয়ে দেখা গেছে, তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বিষয়ে দেখে পড়া এবং বোঝার দক্ষতা নেই ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। পঞ্চম শ্রেণির গণিতের ন্যূনতম মান অর্জনে সক্ষম মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

প্রতিবেদনে এ অবস্থা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুযোগের কথাও বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের উদাহরণ সামনে আনা হয়। বিশ্বব্যাংকের সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

শিক্ষার মান উন্নয়নে আরও বিস্তারিত সুপারিশে বিশ্বব্যাংক বলেছে, মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার মান বাড়াতে পারে বাংলাদেশ। শিখন পদ্ধতির উন্নয়ন, স্কুলগামী করতে শিক্ষার্থীদের প্রেরণা জোগানো, নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে কার্যকর নীতি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিক, বেসরকারি খাত ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্পৃক্ত করা উচিত, যাতে মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে আগামীতে এ দেশে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রবার্ট জে সাউম বলেন, শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে সরকারি ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার গড় ব্যয়ের তুলনায়ও কম। মালয়েশিয়ার ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক। টাকার অংকে ব্যয়ের এই চিত্রের চাইতেও মানসম্পন্ন ব্যয় নিশ্চিত করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে দক্ষ শ্রমশক্তি সরবরাহে বাংলাদেশের সামনে বড় সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক শিক্ষাচর্চা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক জাইমে সাভেন্দ্রা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, লোগো ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি সারাহ বুসি প্রমুখ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *