Home » ভারত-পাক-পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে

ভারত-পাক-পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমিত আকারের যুদ্ধের স্বাদ পেয়েছে বিশ্ব। হামলা-পাল্টাহামলার মধ্যে অনেকেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছেন।উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- দুই দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র আছে। এই অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কেও তারা সচেতন। এমতাবস্থায় ঘোষণা দিয়ে দুই দেশ যুদ্ধ শুরু করলে সেটি পরমাণু যুদ্ধে রূপ নেয় কিনা সেটিই এখন উদ্বেগের বিষয়।সীমান্তে চরম উত্তেজনার মধ্যে বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি সেখানে দুই দেশের পরমাণু অস্ত্রের কথা পরিষ্কার করে উল্লেখ করেছেন।ইমরান খান বলেন, এসব ভেবেই এটি অপরিহার্য যে আমরা নিজেদের মগজ ব্যবহার করেছি ও প্রজ্ঞা দিয়ে কাজ করছি। আমি ভারতকে বলছি- আপনাদের যে অস্ত্র আছে, আমাদেরও সেটি আছে। তা হলে কী আমরা ভুল হিসাব কষতে পারি? ১৯৯৮ সাল থেকে পাক-ভারত পাল্লা দিয়ে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। দুই দেশই তাদের অস্ত্রের মজুদ বাড়াতে কাজ করেছে। যদিও চীন ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর তুলনায় তাদের মজুদ খুবই কম। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০১৭ সালের শুরুতে ভারতের ১৩০টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। আগের বছরে যেখানে ১১০টি ছিল, সেখানে এক বছরের মাথায় কুড়িটি বাড়িয়েছে।

ভারতের কাছে পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক ত্রয়ী রয়েছে। অর্থাৎ স্থল, বিমান ও সমুদ্র থেকে তারা পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করতে পারবে। দেশটির ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৩ আওতা হচ্ছে দুই হাজার মাইল।রাশিয়ার সঙ্গে মিলে ভারত ক্রজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রাহমোস নির্মাণ করেছে, যা ভূমি, আকাশ ও সমুদ্র থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব।ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানকে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত ছয় হাজার টনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাবমেরিন রয়েছে, যার নাম আরিহান্ত। ভারতের তুলনায় পাকিস্তান খুবই ছোট একটি দেশ। তাদের হাতেও কিছুটা ভারী অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু ভারতের তুলনায় তাদের সক্ষমতা অত বেশি না। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের হাতে ১৪০টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। এর বছরখানেক আগে যে সংখ্যাটা ছিল ১২০ থেকে ১৩০টির মতো। তবে ভারতের মতো না হলেও পাকিস্তানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা এক হাজার ২০০ মাইল। যদিও উন্নয়নের কারণে তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্রের শক্তিশালী সংস্করণ রয়েছে। তবে পাকিস্তানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম সাবমেরিন নেই।

কিন্তু ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের কাছে অনেক বেশি প্লুটোনিয়াম উৎপাদক চুল্লি রয়েছে। এতে প্রতি বছর গড়ে তারা ২০ করে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ করতে পারে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে জাতীয় ব্যয়ের ১৬ শতাংশের বেশি ছিল প্রতিরক্ষা খাতের খরচ। যেখানে ভারত এই খাতে খরচ করে মাত্র ৯ শতাংশ।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান স্বল্পপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে জোর দিচ্ছে।কারণ ভারতের বিশাল স্থলবাহিনীর মোকাবেলায় কৌশলগত মিশন হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৫ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তির আলোচনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, এ সময় সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে পাকিস্তানের।

প্রতিবেশী দুই দেশই ১৯৬৮ সালের অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তিতে সই করেনি। এ চুক্তিতে সই করা দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে হাত দিতে পারবে না। চুক্তি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়াকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।কারণ ১৯৬৭ সালের আগে তারা পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল।বছরের পর বছর ধরে প্রথমেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি অবলম্বন করে আসছে ভারত। দেশটি জানিয়েছে, তারা প্রথমে পারমাণবিক হামলা চালাতে যাবে না। কেবল পাল্টা হামলা চালাতেই তারা এই অস্ত্রের ব্যবহার করবে।কিন্তু সম্প্রতি ভারত যেভাবে তাদের অস্ত্রের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে, তাতে এ মতবাদ থেকে সরে আসার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ভারত খারনাদ বলেন, কাগজে যা বলা আছে, সেই তুলনায় ভারতীয় মতবাদ ভিন্নভাবে কাজ করতে পারে। অনিশ্চিত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এ অস্ত্র নিক্ষেপের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করা হবে।পাকিস্তান আক্রমণ করলেই ভারত এ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। অথবা তারা নিক্ষেপ করলে ভারতও একই পথ বেছে নিতে পারে।কার্নেগি এন্ডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের পারমাণবিক নীতিবিষয়ক কর্মসূচির সহপরিরচালক টবি ড্যালটন বলেন, পাকিস্তানের নীতি পূর্ণমাত্রায় নিবৃত্তিমূলক। যার অর্থ হচ্ছে- গত কয়েক দিনে আমরা দেখছি, দেশটি ভারতকে এ ধরনের কর্মসূচি থেকে নিবৃত্ত রাখতে প্রতিযোগিতা করছে।পাক-ভারতের বর্তমান সংঘাত নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মুগ্ধ করেছে। যদিও তা বিপজ্জনক। নয়াদিল্লির দ্য সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিজের সি উদয় ভাস্কর বলেন, নিবৃত্তি (ডেটারেন্স) তত্ত্বের পরীক্ষা ও কাজ করার মতো বাস্তবোচিত সময় হচ্ছে এটি। উদ্বেগ প্রকাশ করে ড্যালটন বলেন, ঘরোয়া রাজনীতির কারণে উত্তেজনা বাড়াতে নেতারা প্রলুব্ধ হতে পারে। যদি সেই সম্ভাবনা ১ শতাংশও হয়, তবে তার পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *